যেকোন ত্বকের চেয়ে শুষ্ক ত্বক যত্নে রাখাটা কিছুটা কঠিন। কারণ এটি খুব তাড়াতাড়ি ময়েশ্চার হারিয়ে শুষ্ক হয়ে পড়ে। ড্রাই স্কিনের সাথে অনেক ধরনের সমস্যা জড়িয়ে থাকে যেমন- অতিরিক্ত শুষ্কতা, তেজস্ক্রিয়তা, সংবেদনশীলতা ইত্যাদি। তবে কিছু নিয়ম মেনে আপনিও আপনার শুষ্ক ত্বকের সঠিক যত্ন নিতে ড্রাই স্কিন কেয়ার রুটিন সাজিয়ে নিতে পারেন আর তার জন্যই আজকের এই লেখা। আপনি ধারাবাহিকভাবে কিছু রুটিন মেনে চললে ড্রাই স্কিনের যে কোন ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করতে পারবেন। তাহলে চলুন দেখে নেয়া যাক কিভাবে আপনার ড্রাই স্কিনের ময়েশ্চার ধরে রেখে স্কিনকে আরো কোমল ও উজ্জ্বল করে তুলবেন।
ড্রাই স্কিনের যত্নে প্রতিদিনকার রুটিন
সময়টাকে ভাগ করুন ৩টা সময়ে-
১) সকাল
২) দুপুর
৩) রাত
১. সকালের যত্ন
১ম ধাপ
সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রথমে যে কাজটা করবেন তা হলো, ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিয়ে আপনার মুখ কয়েকবার ধুয়ে নিন। এতে আপনার মুখের ত্বক খুব দ্রুত রিফ্রেশড হয়ে উঠবে।
২য় ধাপ
তারপর একটি ময়েশ্চারাইজিং ক্লিনজার দিয়ে আপনার মুখ আস্তে আস্তে ম্যাসাজ করে ধুয়ে নিন। কেমিক্যাল জাতীয় ফেইস ওয়াশ ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক ফেইস ওয়াশ ব্যবহার করার ট্রাই করবেন কারণ প্রাকৃতিক উপাদানগুলোই ত্বকের জন্য সবচেয়ে ভালো।
৩য় ধাপ
এবার আপনার মুখ আলতোভাবে মুছে নিয়ে একটি ভালো টোনার লাগিয়ে নিন। এক্ষেত্রে আপনি গোলাপজল ইউজ করতে পারেন কারণ এটি খুব ভালো টোনার হিসেবে কাজ করে।
৪র্থ ধাপ
এখন ময়েশ্চারাইজিং-এর পালা। আপনার ত্বকে ভালো কোন ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম লাগিয়ে নিন। যতক্ষণ পর্যন্ত এটি ত্বকের সাথে ভালোভাবে মিশে না যায় ততক্ষণ আস্তে আস্তে ম্যাসাজ করতে থাকুন কারণ ময়েশ্চারাইজিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৫ম ধাপ
এবার সানস্ক্রিনের সময়। আপনি যদি বাড়ির বাইরে যান তবে বাসা থেকে বের হওয়ার ১৫-২০ মিনিট আগে একটি ভালোমানের সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিন। এসপিএফ ৩০ আছে কি না লক্ষ্য রাখবেন। বাইরে গেলে প্রতি কয়েক ঘন্টা পরপর পুনরায় সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিন।
৬ষ্ঠ ধাপ
আপনি যদি মেকআপ ব্যবহার করতে চান তবে লাইট মেকআপ আপনার জন্য বেস্ট হবে। সেক্ষেত্রে আপনি ময়েশ্চারাইজার, বিবি ক্রিম এবং কনসিলার ব্যবহার করতে পারেন। তবে লক্ষ্য রাখবেন মেকআপের ফলে ত্বক যেন অতিরিক্ত শুষ্ক না হয়ে যায়।
২. দুপুরের যত্ন
১ম ধাপ
আপনার মর্নিং রুটিন আপনার ত্বককে ভালো সাপোর্ট দিবে অনেকক্ষণ পর্যন্ত। কিন্তু লাঞ্চের আগের টি ব্রেক-এ ত্বকে হালকা টাচ-আপ করে নেয়াটা ত্বকের জন্য ভালো হবে। এ সময় আপনি মুখে হালকা ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে পারেন।
২য় ধাপ
মুখের যত্ন নিতে গিয়ে আপনার ঠোটের কথা ভুলে যাবেন না যেন। তাই আপনার সাথে একটি বাটার লিপ বাম সব সময় ক্যারি করুন এবং ঠোট শুষ্ক হয়ে যাওয়ার আগেই ঠোঁটে লিপ জেল লাগিয়ে নিন এবং ময়েশ্চারাইজার ধরে রাখুন সারাদিন।
৩য় ধাপ
ত্বকের বাহ্যিক যত্ন নেয়ার পাশাপাশি আপনার এটাও খেয়াল রাখতে হবে যেন ত্বক ভেতর থেকে ময়েশ্চারাইজড থাকে। তাই আপনার সারাদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাওয়া হচ্ছে কি না সেটা খেয়াল রাখুন। পানি সাথে না থাকলেও ফ্রেশ জুস বা তরল জাতীয় খাবার চালিয়ে যান।
৪র্থ ধাপ
ভিটামিন সমৃদ্ধ খাদ্য খান। এটা সাহায্য করবে আপনার ত্বকের কোমলতা ও আদ্রতা বজায় রাখতে। তাই অতিরিক্ত ভাজা পোড়া খাবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন এবং খাবার তালিকায় যোগ করুন কাঁচা ও তাজা ফলমূল ও সবজি।
৫ম ধাপ
এবার আপনার স্টাডি বা জব প্লেস ছেড়ে বাসায় যাওয়ার আগে আরেকবার মনে করে মুখে রাউন্ডভাবে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।
৩. রাতের যত্ন
১ম ধাপ
যে কোন ধরনের ত্বকের জন্যই রাতের বেলার যত্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমের মধ্যেই ত্বকের সর্বোচ্চ পরিবর্তনগুলো ঘটে থাকে তাই ঘুমানোর আগে যদি আপনি ত্বকের সঠিক পরিচর্যা করেন তাহলেই আপনার ত্বক থাকবে সুস্থ ও সুন্দর। তাই ঘুমানোর আগে ত্বকে সঠিক পণ্যের মাধ্যমে সঠিক যত্ন নিন।
২য় ধাপ
বাসায় ফিরে আসার পরে উষ্ণ পানি দিয়ে আপনার মুখ ধুয়ে ফেলুন এবং মুখের সব মেকআপ তুলে ফেলুন যে কোন মেকআপ রিমুভার বা তেল ইউজ করে।
৩য় ধাপ
তারপর সকালের নিয়মগুলো একইভাবে অনুসরণ করে আপনার মুখ পরিষ্কার করে মুখে ভালো একটি নারিশিং নাইট ক্রিম লাগিয়ে নিন। এটা সারারাত আপনার ত্বককে ময়েশ্চারাইড করবে।
৪র্থ ধাপ
এটা নিশ্চিত করুন যে আপনার যেন কমপক্ষে ৭-৮ ঘন্টার একটা ভালো ঘুম হয়।
এছাড়াও, প্রতি সপ্তাহে একবার আপনার ত্বক এক্সফোলিয়েট করতে এবং ত্বকে ময়েশ্চারাইজিং ফেইস মাস্ক ইউজ করতে ভুলবেন না যেন!
ড্রাই স্কিন কেয়ার রুটিন নিয়ে কিছু টিপস
১) বেশি গরম পানি দিয়ে গোসল করা থেকে একেবারেই বিরত থাকুন। কারণ গরম পানি আপনার শুষ্ক ত্বক আরো শুষ্ক করে তুলবে। তাই চেষ্টা করুন নরমাল বা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করার।
২) প্রতিবার ত্বক পরিষ্কার করার পরে কখনোই ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম এবং লোশন লাগাতে ভুলবেন না কারণ এতে ত্বক আরো শুষ্ক হয়ে পড়ে।
৩) অতিরিক্ত কড়া গন্ধযুক্ত পারফিউম এবং কেমিক্যালযুক্ত পণ্য ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। এগুলো ত্বককে আরো ড্রাই করে দেয়।
৪) সব সময় আরামদায়ক পোশাক পরার চেষ্টা করুন, এতে আপনার ত্বক ভালো থাকবে। সুতি, খাদি এগুলো ড্রাই স্কিনের জন্য বেস্ট চয়েজ।
৫) সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। কারণ এতে আপনার ত্বকের ট্যানিং বেড়ে গিয়ে ত্বক আরো ড্রাই হয়ে যাবে।
উপরে উল্লিখিত ড্রাই স্কিন কেয়ার রুটিন মেনে চললে কিছুদিনের মধ্যেই আপনার ত্বকের পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারবেন। তাই আজ থেকে আর শুষ্ক ত্বক নিয়ে চিন্তিত না হয়ে আপনার ত্বকের যত্ন নিন এবং ত্বকের ময়েশ্চারাইজিং ধরে রাখা নিশ্চিত করুন।
সংগৃহিতঃ সাজগোজ