দেখতে দেখতে বছর ঘুরে ফিরে এল শীতের আমেজ। হিম হিম ঠান্ডা হাওয়ার দাপটে এই সময় ত্বক হয়ে ওঠে রুক্ষ, শুষ্ক, টানটান। শীতের দাপুটে বাতাস, ধুলাবালু, ঠান্ডা, কাশি আর শীতপোশাক নিয়ে টালমাটাল সময়ে আর ব্যস্ত জীবনে ত্বকের দিকে খেয়াল রাখা হয় কমই। আর এ সুযোগেই আমাদের ত্বকের যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে যায়। তাই এ সময় ত্বক রুক্ষ ও অনুজ্জ্বল হয়ে যাওয়া রোধ করতে চাইলে দরকার একটু বাড়তি যত্নের। নিয়মিত যত্নে শীতেও ত্বক থাকবে মসৃণ, ঝলমলে, দ্যুতি ছড়ানো স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের অধ্যাপক নার্গিস আখতার জানান, শীতে ত্বকের শুষ্কতা রোধ করতে জলপাই তেল, লোশন বা ভ্যাসলিন মাখতে হবে। তাতে ত্বক আর্দ্রতা ধরে রাখবে। পানি, পানিজাতীয় খাবার, ফল ও ফলের রস, সতেজ শাকসবজি ও ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে। কফির বদলে চা পান করা উত্তম। সবুজ চা খেতে পারলে খুবই ভালো, তবে লাল চায়ে আদা বা লেবু মিশিয়ে খেলেও সেটা ত্বকের জন্য উপকারী। শীতে ভারী পশমি কাপড় জড়ানোর আগে অবশ্যই পাতলা ফুলহাতা সুতি পোশাকের ওপর সেগুলো পরতে পারলে খুব ভালো। হাত–পায়ে মোজা জড়াতে পারলে ত্বক থাকবে আরামে। অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব থেকে বাঁচতে ছাতা ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো, তবে শীতকালেও বাইরে বের হওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ত্বকে যেটিই ব্যবহার করুন না কেন, কালো হয়ে যাওয়া, ফুসকুড়ি, চুলকানো, লাল হয়ে যাওয়াসহ যেকোনো ধরনের সমস্যা হলেই দ্রুত সেটির ব্যবহার বন্ধ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
এ তো গেল বিশেষজ্ঞের মতামত। শীতে ত্বকের যত্নের কিছু কথা জানালেন রূপবিশেষজ্ঞ। ত্বকের ধরন অনুযায়ী শীতে কোন ধরনের ত্বকে কেমন যত্ন নেওয়া উচিত, জানতে চেয়েছিলাম বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ বিউটি কেয়ারের রূপ বিশেষজ্ঞ শারমিন কচির কাছে। তিনি জানান ধরন অনুসারে ত্বক পরিচর্যার কিছু উপায়।
শুষ্ক ত্বকের যত্নশুষ্ক ত্বক শীতে আরও বেশি রুক্ষ, শুষ্ক হয়ে পড়ে। এ ধরনের ত্বকের জন্য ভিটামিন ই তেল আধা চামচ আর আধা চামচ গ্লিসারিন মিশিয়ে প্রতিদিন লাগাতে পারেন। ত্বকে পুষ্টি জোগাতে ডিমের কুসুম, ১ চা-চামচ মধু, আধা চামচ জলপাই তেল ও পরিমাণমতো গোলাপজল মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই দিন ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন
যাঁদের ত্বক বেশি তৈলাক্ত, তাঁরা ক্লিনজিং ও ময়েশ্চারাইজিংয়ের ক্ষেত্রে তেলমুক্ত (অয়েল ফ্রি) পণ্য ব্যবহার করুন। ক্লিনজিং ও টোনিংয়ের পর লেটুসপাতার রস, মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে লাগাতে পারেন। ঘরোয়া ময়েশ্চারাইজার হিসেবে টমেটোর রস খুব ভালো কাজ করে। আনারস, আপেল, পাকা পেঁপের সঙ্গে মধু মিশিয়ে প্যাক ব্যবহার করতে পারেন অনায়াসেই।
মিশ্র ত্বকের যত্ন
প্রতিদিন হালকা ক্লিনজার ব্যবহার করতে হবে মিশ্র ত্বকের অধিকারীদের। তবে ত্বকের শুষ্ক জায়গাগুলো অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার লাগাবেন। সেদ্ধ করা মিষ্টিকুমড়া চটকে তার সঙ্গে মধু ও দুধ পরিমাণমতো মিশিয়ে ২০ মিনিট রেখে তারপর ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। এ প্যাকটি সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
টিপস
* গোসলের পর এবং প্রতিবার মুখ ধোয়ার পর ত্বক ভেজা থাকতেই ময়েশ্চারাইজার বা লোশন ব্যবহার করা উচিত। এতে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে। পাশাপাশি স্নিগ্ধ সতেজতা ফুটে উঠবে চেহারায়।
* শীতকালে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে মাঝেমধ্যে মুখে পানির ঝাপটা দেওয়া ভালো। তাহলে ত্বক সহজে শুষ্ক হয়ে যাবে না।
* অতিরিক্ত গরম পানি ত্বকের কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে ত্বকের আর্দ্রতা নষ্ট হয়। গোসলের সময় আরাম অনুভব হলেও অতিরিক্ত গরম পানি দিয়ে মুখ, মাথা ধোয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
* কখনোই ঠোঁট শুকনা অনুভব করলে জিব দিয়ে ভেজানো উচিত নয়। ঠোঁট নরম রাখতে গ্লিসারিন ব্যবহার করা যেতে পারে। কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল মধুর সঙ্গে মিশিয়ে ঠোঁটে লাগালে ঠোঁট কখনোই ফেটে যাবে না। ঘুমের সময় লিপজেল অথবা পেট্রোলিয়াম জেলি লাগালেও নরম থাকবে ঠোঁট।
* জলপাই তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। জলপাই তেলবা ময়েশ্চারাইজার পুরো মুখে ভালো করে মালিশ করে ঘুমিয়ে পড়বেন, এতে ত্বক পরিষ্কার হবে এবং সকালে দেখবেন ত্বক হয়ে উঠবে প্রাণবন্ত।
Courtesy: Prothom Alo